ক.
পঁচাত্তর বছর আগে বাংলায়
মর্মন্তুদ মন্বন্তরে ভরে যায় লাশে
লক্ষাধিক ভিটাছাড়ে খাবার তালাশে
গ্রামীণ কাঠামোগুলো মাটিতে মিলায়।
বেণিয়ার কষাঘাতে পঙ্গু মেরুদণ্ড
দুইযুগে করে ক্ষত পাকিস্তানি লাঠি
শোষণের যাঁতাকলে তামা হয় মাটি
সোনার দেশের গতি হয়ে যায় প-।
একাত্তরে যুদ্ধজয়ী বিপ্লবী জনতা
গোবাদিতে মাছে ধানে সবজি কি ফলে
তামা মাটি ভরে তোলে সোনার ফসলে
দ্বিতীয় বিপ্লব হাসে পেয়ে সফলতা।
তার সাথে তথ্য দিয়ে সুদীর্ঘ বছরে
সেবা দেয় কৃষিকথা গ্রামে ও শহরে ॥
খ.
ধান সেতো প্রাণ বুনি ফসলের মাঠে
তাড়া তাই খানা নাই মাতি নিয়ে কাজ
ফসলের কিছু হলে ভালে পড়ে ভাঁজ
ভোর থেকে সাঁজে কাজে শরীরটা টাটে।
ঘরের তেনার হাত দশখানা লাগে
পশুপাখি মানুষের জোগাতে খোরাক
ধরাবাঁধা কাজকামে থাকে না ফারাক
সবকিছু সারা হয় বিজলির আগে ।
রাতে ঘুম গাঢ় হয়ে নেমে এলে চোখে
মশার সারিন্দা সাথে উলুসের হানা
শিয়ালে ইঁদুরে চোরে শানায় বাহানা
হল্লায় তাড়িয়ে সব ঘুমাই পলকে।
শ্রমে ঘামে কাজ করি দূরে ঠেলে ক্লেশ
যারে নিয়ে স্বপ্ন দেখি সে আমার দেশ ॥
গ.
বৈশাখে গরম ঢালে দোজকের শ্বাস
জমিন ফেটে চৌচির খালে পানি নাই
নির্জলা নদীরা ধূ ধূ বালিতে বোঝাই
পথেঘাটে চারিদিকে চলে হা হুতাস।
ধানের সবুজ চারা ধূসর কাতর
অগ্নিঝরা তাপ যেন ফসলের মাঠে
ফুঁসে দাপিয়ে বেড়িয়ে বারবেলা কাটে
এ সময়ে বেড়ে যায় পানির কদর।
বিকালে হঠাৎ কালো মেঘ ও তুফান
তেড়ে আনে শিলাবৃষ্টি হিরা যেন ঝরে
ক্ষতি করে প্রাণ ঘর শস্য অফুরান
দুনিয়া শীতল হয় মাঠ জলে ভরে।
সজীব ধানের চারা পাতা নেড়ে নাচে
বৈশাখী পূর্ণিমা রাত জোছনায় ভাসে॥
ঘ.
ফাল্গুনে শুকনা মাঠে বোনা আমনের
নিচু খেতে চারাগুলো ঝিম মেরে থাকে।
পাল্লা দিয়ে বাড়ে জলে অঘ্রাণে তা পাকে
গ্রামেগঞ্জে দোলা লাগে পৌষ পার্বণের।
খরিফে আউশ বোনা অথবা খোঁচায়
খরা ও বৃষ্টির ছাঁটে বাড়ে তাড়াতাড়ি
উফশী রোপণ হলে য বলিহারি
ফসল তেলার আগে কভু বানে খায়।
এখন বছরজুড়ে ভরামাঠ ধানে
আউশ আমন বোরো তিনটি মৌসুমে
উফশী ও হাইব্রিড কৃষকেরে টানে
ভরা থাকে গোলা-ঝোলা আনন্দে কুটুমে।
খরা বন্যা মঙ্গা ছিল সেকালে আকাল
আধুনিক ধানের চাষে খুলেছে কপাল॥
কৃষিবিদ এ এইচ ইকবাল আহমেদ*
* পরিচালক (অব.), বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি। সেল ০১৫৫৮৩০১৯০৮ (ahiqbal.ahmed@yahoo.com)